সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বাবুগঞ্জে নবাগত ইউএনও’র সাথে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সৌজন্য সাক্ষাৎ কলাপাড়ায় ধান চুরির প্রতিবাদ করায় একই পরিবারের চারজনকে কুপিয়ে জখম  এই সরকারকে আ,লীগের গড়া সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে – উজিরপুরে জামায়াতে ইসলামের আমির ডাঃ শফিকুল ইসলাম উজিরপুরে চাঞ্চল্যকর জোরা খুনের মামলার স্বাক্ষীর বিরুদ্ধে আসামী পক্ষের মামলা, -প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন বাস চাপায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিহত মির্জাগঞ্জে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উজিরপুরে তৌহিদুজ্জামান সোহাগের দূরদর্শীতায় চাঞ্চল্যকর জোরা খুনের রহস্য উন্মোচন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ মোঃ আরিফের পাশে দাড়ালো “মির্জাগঞ্জ মানবতার ফেরিওয়ালা” বরিশালে মাহমুদিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের জঘন্য স্বৈরাচারীতা তরুণ সাংবাদিক শাকিল খান এর শুভ জন্মদিন আজ

বরিশালে ২০০ টাকার ফেরি ভাড়া ২৮০০ টাকা নীরব সড়ক ও জনপদ বিভাগ

  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৪
  • ৭৩ বার পঠিত

বরিশালে ২০০ টাকার ফেরি ভাড়া ২৮০০ টাকা নীরব সড়ক ও জনপদ বিভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালের নদী পরিবেষ্টিত ৩টি উপজেলা মুলাদী, হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ। বিচ্ছিন্ন এ তিন দ্বীপ উপজেলার বাসিন্দাদের বরিশাল শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম মুলাদী ও বাবুগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী আড়িয়াল খাঁ নদীর মীরগঞ্জ ফেরিঘাট।

অভিযোগ উঠেছে, ঘাটের ইজারাদার প্রভাব খাটিয়ে যানবাহন ও যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ থেকে সর্বোচ্চ দশগুণ পর্যন্ত ভাড়া আদায় করছেন। ইজারাদার প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না। প্রতিবাদ করলেই ইজারাদারের বাহিনীর হামলা-নির্যাতন ও লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন যাত্রী, যানবাহন মালিক ও শ্রমিকরা।

এতে তিন উপজেলার ৭০ লাখ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন। সব কিছু জেনেও নীরব রয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মীরগঞ্জ ফেরি সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর ইজারা দিয়ে থাকে। ফেরি ঘাটের ইজারা রয়েছে মেসার্স শিমু এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে। এ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম খোকনের স্ত্রী শিমু। বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রভাবশালী প্যানেল মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য রফিকুল ইসলাম খোকন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আমলে বরিশালে তিনি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন।

গত ৫ আগস্টের পর থেকে খোকন আত্মগোপনে চলে যায়। কিন্তু তার নিয়ন্ত্রিত ব্যাবসা বাণিজ্য রয়েছে বহাল তবিয়তে। রফিকুল ইসলাম খোকন আত্মগোপনে থেকেও তার পরিবারের লোকজন দিয়ে মীরগঞ্জ ফেরি ঘাট পরিচালনা করছেন। ঘাট নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নেপথ্যে থেকে শক্তি জোগান দিচ্ছে বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতা।

প্রতিদিন এই ঘাটে পারাপার হয় ২৫-৩০ হাজার যাত্রী। তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যানবাহনের চাপ বেড়েছে। আগে নির্ধারিত সময়ে ফেরি চলাচল করলেও এখন যানবাহনে পূর্ণ হলেই ছাড়া হয় ফেরি। আর মাঝ নদীতে আটকে আদায় করা হয় বহুগুণ ভাড়া।

যাত্রীদের অভিযোগ ও ঘাট সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রতি ভাড়া আট টাকা হলেও দিতে হয় ২০ টাকা। একইভাবে ফেরি পারাপারে একটি মোটরসাইকেলের ভাড়া পাঁচ টাকা নির্ধারণ থাকলেও গুনতে হয় ৬০ টাকা। একটি ট্রেইলারের সর্বোচ্চ ভাড়া ২৫০ টাকা এবং হেভি ট্রাকের ভাড়া ২০০ টাকা নির্ধারণ থাকলেও বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হয় ২৮০০ টাকা। এ ছাড়া বাসের ভাড়া ৯০ টাকা হলেও আদায় হয় ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, মালবাহী অটোগাড়ি ৪০ টাকার স্থলে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পিকআপ ৮০ টাকার স্থলে সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকা এবং প্রাইভেট কার ৫০ টাকা নির্ধারণ থাকলেও গুনতে হয় ২৮০০ টাকা। এটি দিনের চিত্র হলেও ঘড়ির কাঁটায় রাত ৮টা বাজতেই স্বেচ্ছাচারিতা চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। তখন ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করে ইজারাদারের লোকজন। ভাড়া আদায়ে কোনো রসিদও দেওয়া হয় না।

গাইবান্ধা থেকে গভীর নলকূপ স্থাপনের মালামাল নিয়ে আসা ট্রাকচালক শিপন বলেন, লোড হোক বা খালি ট্রাক একবার ফেরি পার হতেই গুনতে হয় ১ হাজার ৪০০ টাকা। আর আপ-ডাউনে দিতে হয় ২ হাজার ৮০০ টাকা। কিন্তু এই ভাড়া আদায়ের রসিদ দেওয়া হয় না।

বরিশাল সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন বলেন, ঘাটে বাড়তি ভাড়া আদায়ের কথা শুনলেও এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ নেই।

বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান বলেন, মীরগঞ্জ ফেরিঘাটে অনেক আগে থেকেই অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতা বিদ্যমান। আমি মনে করি দুর্বল এমপির কারণেই মীরগঞ্জের মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

বরিশাল-৩ আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, সংসদ সদস্য থাকাকালীন আমার ব্যক্তিগত গাড়ি পার হতেও মীরগঞ্জ ঘাটে গুনতে হয়েছে ১৬০০ টাকা। যেখানে আমার গাড়ি থেকেই বাড়তি টাকা রাখা হয়। সেখানে সাধারণ জনগণের কী অবস্থা সেটা বোঝাই যায়। হয়ত আমার থেকেও শক্তিশালী লোক ওখান থেকে টাকা নেয়। এ কারণে ফেরিঘাটের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। এখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য সংসদে আমি দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছি। সেতু না হওয়া পর্যন্ত এ দুর্ভোগ শেষ হবে না।

অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ঘাটের দায়িত্বে থাকা ইজারাদারের সহযোগী মামুন দাবি করেন, এখন জ্বালানিসহ সবকিছুর দাম বেশি। ফেরি এবং ট্রলারের ভাড়াও বেড়েছে। তাই নিয়ম মেনেই ভাড়া রাখা হচ্ছে।

ইজারাদার রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবো।

Facebook Comments Box
এই ক্যাটাগরির আরও খবর